ছবির ভেতরের মানুষ || বাংলা ভৌতিক গল্প
শুভ একজন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় তার অসম্ভব ভালোবাসা। ঢাকা শহরের ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে সে শহরের বাইরে একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নেয়। বাড়িটা অনেকটাই পরিত্যক্ত, তবে সেখানে একান্তে নিজের মতো করে সময় কাটানো যাবে—এই ভেবেই সে সেখানে থাকতে শুরু করে।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে শুভ দেখতে পেল একটি ধুলোময় ক্যানভাস ও রংতুলি পড়ে আছে। যেন কেউ অনেকদিন আগে এখানে ছবি আঁকছিল কিন্তু অসমাপ্ত রেখেই চলে গেছে। অদ্ভুত একটা আকর্ষণ অনুভব করে সে সেই ক্যানভাসে নতুন ছবি আঁকতে শুরু করে। বিষয়—একজন নারী, যার চোখ যেন কথা বলে, মুখে রহস্যময় হাসি।
কিন্তু ধীরে ধীরে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে। প্রথম রাতে শুভ ঘুম থেকে উঠে দেখে, ক্যানভাসে নারীর চোখের দৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবে হয়তো বিভ্রম। কিন্তু পরের দিন সে দেখে নারীর পোশাকের রং বদলে গেছে, এমনকি পেছনের দৃশ্যেও নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে—যা সে আঁকেনি!
তৃতীয় রাতে, সে ঘুম থেকে উঠে দেখে, ছবির নারীর মুখে একরকম আতঙ্ক। চোখ যেন তাকে কিছু বলতে চায়। শুভ ভয় পেয়ে যায়। তার মনে হতে থাকে, সে একা নেই। বাড়ির ভেতরে মাঝে মাঝে হালকা পায়ের শব্দ, দরজার খোলা-বন্ধ হওয়া, বাতাসে এক ঠান্ডা শীতলতা অনুভব করে।
একদিন রাতে সে হঠাৎ অনুভব করে কেউ তার কাঁধে হাত রাখছে। পিছনে তাকিয়ে কেউ নেই, কিন্তু সে ঘুরে এসে দেখে—ছবির নারী নেই! পুরো ক্যানভাস খালি! এরপরই সে বুঝতে পারে, এই ক্যানভাস কোনো সাধারণ ছবি নয়, এটা একটি আত্মা বন্দি করার দরজা।
বাড়ির পুরনো মালিকের ডায়েরি খুঁজে পায় সে। তাতে লেখা—"এই ছবিতে যে-ই আঁকবে, সে ধীরে ধীরে ছবির ভেতরে চলে যাবে আর আরেকজন বাস্তবে ফিরবে।" শুভ বুঝতে পারে, সে নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে। প্রতিদিন সে যেন একটু একটু করে সেই নারীর জায়গা নিচ্ছে, আর নারীটি ধীরে ধীরে বাস্তব জগতে প্রবেশ করছে।
শেষ রাতে শুভ একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে, তার চেহারা কেমন যেন বদলে গেছে। ছবির নারীর চোখ, ঠোঁট—সব কিছু যেন ধীরে ধীরে তার মধ্যেই মিশে যাচ্ছে।
পরদিন সকালে সেই বাড়িতে কেউ আর শুভকে খুঁজে পায় না। দেয়ালে ঝোলানো ক্যানভাসে দেখা যায়—একজন পুরুষ, যিনি আতঙ্কিত দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছেন। আর তার মুখটা—হুবহু শুভ’র মতো!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন