শিশুর কান্না || ভুতের গল্প
![]() |
শিশুর কান্না || ভুতের গল্প |
মধ্যরাতের নিরবতা সবসময়ই রহস্যময়, আর যখন সেই নীরবতায় অজানা কোনও শব্দ ভেসে আসে, তখন তা ভয়ের জন্ম দেয়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল নীলাদের নতুন বাসায় উঠার পর। শহরের বাইরে শান্ত পরিবেশে অবস্থিত এই পুরনো বাড়িটি ছিল বেশ সুন্দর, কিন্তু কিছুদিন পরই সেই বাড়ির অদ্ভুত অতীত নীলাদের সামনে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে।
নীলা ও তার স্বামী রায়হান এই বাড়িতে উঠার পর থেকেই রাতে অদ্ভুত এক শব্দ শুনতে শুরু করে। প্রথম কিছুদিন তেমন গুরুত্ব না দিলেও, পরবর্তীতে শব্দটি আরও স্পষ্ট হতে থাকে—এটি ছিল একটি শিশুর কান্না। তারা ভেবেছিল আশেপাশের কোনো বাড়ি থেকে হয়তো শব্দটি আসছে, কিন্তু কৌতূহলী হয়ে একদিন বাইরে গিয়ে দেখে, আশেপাশের বাড়িগুলো বেশ দূরে এবং সেখান থেকে কোনও শব্দ আসার সম্ভাবনা নেই।
এক রাতে, কান্নার শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে নীলার ঘুম ভেঙে যায়। সে রায়হানকে ডেকে তুলে জানায়, "তুমি শুনছ? এটা আসলে কোথা থেকে আসছে?" রায়হানও স্পষ্টভাবে সেই কান্নার শব্দ শুনতে পায়, যা ঘরের ভেতর থেকেই আসছিল। দুজনেই আতঙ্কিত হয়ে ঘরের প্রতিটি কোণ খুঁজতে থাকে, কিন্তু কোথাও কোনও শিশুর অস্তিত্ব নেই।
পরের দিন সকালে নীলা বাড়ির কাজের লোক রমিজকে জিজ্ঞাসা করে, "তুমি কি কখনও কোনও শিশুর কান্নার শব্দ শুনেছ এখানে?" রমিজের চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য ভয় দেখা যায়, তারপর সে মুখ ফিরিয়ে বলে, "আপা, এই বাড়ির অতীত ভালো নয়। বহু বছর আগে এখানে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল।
কৌতূহলী হয়ে নীলা রমিজের কাছে আরও জানতে চায়। রমিজ কাঁপা গলায় বলে, "এই বাড়িতে এক সময় এক দম্পতি থাকতো। তাদের একমাত্র সন্তান, মাত্র দুই বছর বয়সী মেয়ে, এক রাতে রহস্যজনকভাবে মারা যায়। মা, মেয়ের দুঃখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে আত্মহত্যা করে। লোকমুখে শোনা যায়, সেই মেয়ের আত্মা এখনও এই বাড়িতে আটকে আছে। আর মাঝেমধ্যে রাতে তার কান্নার শব্দ শোনা যায়।
এই কথা শুনে নীলা আরও ভয় পায়। রাতে কান্নার শব্দ যেন আরও তীব্র হতে থাকে। নীলা ও রায়হান ঠিক করে, তারা আর এখানে থাকতে পারবে না। পরের দিনই তারা বাসা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিদায়ের আগের রাতেই সেই কান্নার শব্দ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। নীলা ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার বিছানার পাশে একটি ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে জল। ভয়ে জমে যাওয়া নীলা কোনও আওয়াজ করতে পারে না। মেয়েটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে নীলা ও রায়হান বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তবে নীলা জানে, সেই শিশুর কান্না এখনও থামেনি। হয়তো সে তার মাকে খুঁজছে, অথবা এমন কিছু চায় যা সে জীবিত অবস্থায় পায়নি। নীলাদের পরবর্তী যে বাসিন্দাই হোক, তারাও হয়তো সেই কান্নার মুখোমুখি হবে।
শিশুটির কান্না যেন সময়ের সাথে মিলিয়ে যায় না, বরং আরও গভীর হয়, আরও মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে। এই বাড়িটি তাই আজও অভিশপ্ত হিসেবে পরিচিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন