শান্তি দেবীর পুনর্জন্ম || সত্য ঘটনা

 


শৈশব ও অতীত জীবনের স্মৃতি

  • জন্ম ও পূর্বজন্ম পরিচয়
    শান্তি দেবী জন্মগ্রহণ করেন দিল্লিতে, ১১ ডিসেম্বর ১৯২৬ সালে। তাঁর জন্মের মাত্র ২২ মাস আগে, ১৯২৫ সালের ৪ অক্টোবর, মথুরার এক নারী লুগ্দি দেবী সন্তান জন্মের পরপরই মারা যান। শান্তি পরে দাবি করেন, তিনি সেই লুগ্দি দেবীরই পুনর্জন্ম।

  • শৈশবের অদ্ভুত স্মৃতি
    চার বছর বয়স পর্যন্ত শান্তি কোনো কথা বলেননি। কথা বলা শুরু করেই তিনি মথুরার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন এবং বলেন তাঁর আসল বাড়ি মথুরায়, দিল্লিতে নয়। তিনি জানান, তাঁর স্বামীর নাম কেদারনাথ চৌবে, এবং তিনি সন্তান জন্মের দশ দিনের মাথায় মারা গিয়েছিলেন।

প্রমাণ ও সত্যতা যাচাই

  • অতীত জীবনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ
    স্কুলের প্রধান শিক্ষক লালা চাঁদ কেদারনাথকে খুঁজে পান, যিনি সত্যিই স্ত্রী লুগ্দি দেবীকে হারিয়েছিলেন। প্রথমে কেদারনাথের আত্মীয় ছদ্মবেশে শান্তির সঙ্গে দেখা করেন, কিন্তু শান্তি সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলেন তিনি আসল স্বামী নন।

  • স্বামী ও সন্তানের সাক্ষাৎ
    পরে কেদারনাথ ও তাঁর ছেলে শান্তির সঙ্গে দেখা করতে এলে শান্তি আবেগে ভেঙে পড়েন এবং তাঁদের চিনতে পারেন। তিনি এমন কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জানান, যা কেবল লুগ্দিই জানতেন।

গান্ধীর আগ্রহ ও তদন্ত

  • মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগ
    এই ঘটনা মহাত্মা গান্ধীর কৌতূহল জাগায়। তিনি শান্তিকে আশ্রমে ডেকে পাঠান এবং ১৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন, যেখানে সংসদ সদস্য, নেতা ও সাংবাদিকরা ছিলেন।

  • মথুরা সফর
    ১৯৩৫ সালের নভেম্বরে শান্তিকে নিয়ে ওই কমিটি মথুরা যায়। কোনো দিকনির্দেশ ছাড়াই শান্তি নিজেই পথ দেখিয়ে পূর্বজন্মের বাড়ি খুঁজে বের করেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারেন এবং এমনকি একটি লুকোনো কূপের অবস্থানও সঠিকভাবে বলেন।

  • কমিটির সিদ্ধান্ত
    ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে কমিটি উপসংহার টানে যে শান্তি দেবী আসলেই লুগ্দি দেবীর পুনর্জন্ম।

সংশয় ও বিতর্ক

  • সমালোচনা
    গবেষক বলচাঁদ নহতা একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যেখানে তিনি এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, পুনর্জন্ম প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

  • সমর্থন
    তবে পরবর্তী গবেষকরা, বিশেষত দার্শনিক ইন্দ্র সেন, শান্তির দাবি সমর্থন করেন এবং নহতার সমালোচনাকে খণ্ডন করেন।

পরবর্তী জীবন

  • স্মৃতি অব্যাহত
    অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে অতীত জীবনের স্মৃতি বড় হওয়ার পর ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু শান্তির ক্ষেত্রে তা আজীবন ছিল। তিনি আর বিয়ে করেননি, কারণ নিজেকে এখনও কেদারনাথের স্ত্রী মনে করতেন।

  • শেষ জীবন
    জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি হিন্দু দর্শন শেখাতেন ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। শান্তি দেবী মারা যান ২৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে।


সারসংক্ষেপ সারণি

বিষয়তথ্য
জন্ম১১ ডিসেম্বর ১৯২৬, দিল্লি
পূর্বজন্মলুগ্দি দেবী, মৃত্যু ৪ অক্টোবর ১৯২৫, মথুরা
মূল প্রমাণস্বামী-সন্তান চিনতে পারা, বাড়ি ও আঞ্চলিক ভাষা জানা
তদন্তমহাত্মা গান্ধীর গঠিত কমিটি (১৯৩৫)
উপসংহার১৯৩৬ সালে পুনর্জন্ম সত্য বলে ঘোষণা
বিতর্কনহতার সমালোচনা, ইন্দ্র সেনের সমর্থন
পরবর্তী জীবনস্মৃতি আজীবন ছিল, বিয়ে করেননি, মৃত্যু ১৯৮৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নিরব কান্না || সুহার জীবনের গল্প

প্রাচীন গাছের আড়ালে || ভুতের গল্প

শিশুর কান্না || ভুতের গল্প